কিডনি ও তার যত্ন

 মানুষের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো কিডনি।  মানুষের শরীরে দুটি কিডনি থাকে।প্রত্যেকটি কিডনি প্রায় ১২৫ গ্রামের ওজনের হয়।মানব কিডনি প্রায় পাঁচ ইঞ্চি লম্বা এবং তিন ইঞ্চি চওড়া। 

কিডনি  আমাদের শরীরে থাকা বিষক্রিয়া প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে  নিঃসরণ করে।কিডনি যখন সমস্যার মুখে পড়ে তখন তা সমাধান করা অসম্ভব। তাই আমাদের প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে হবে যাতে  ভবিষ্যতে কিডনি সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয়।

  কিডনি স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া সমস্ত ব্যক্তিকে প্রতিদিনের জীবনযাপনে কিছু উপযোগী পরামর্শ পালন করা উচিত।

কিডনি সম্পর্কিত পরামর্শগুলি হল:

 


১. পর্যাপ্ত পানি পান করা: প্রতিদিন অন্তত আট থেকে দশ গ্লাস পানি পান করা উচিত। এটি কিডনি সম্পর্কিত সমস্যার ঝুঁকি কমিয়ে আনতে সাহায্য করে এবং শরীরের পানির পরিমাণ বজায় রাখে।বিভিন্ন কারনে পানির চাহিদা বাড়তে পারে, বিশেষ করে  ডায়রিয়া  বা  বমি হলে  পর্যাপ্ত পরিমাণে  পানি, স্যালাইন এবং অন্যান্য তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে ।  আবহাওয়ার পরিবর্তনেও  পানির চাহিদা কমবেশি হয়।

২. প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া: প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া কিডনি সম্পর্কিত সমস্যার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন পর্যাপ্ত আমিষ জাতীয়  খাবার খেতে হবে। প্রতিদিন পরিমাণ মত  মাংস, মাছ, ডাল, ফল এবং সবজি খেতে পারলে সবচেয়ে ভালো হবে ।  

 



 ৩. অতিরিক্ত লবন পরিহারঃ কিডনি সুস্থ রাখার জন্য দৈনন্দিন খাবারে মাত্রাতিরিক্ত লবন পরিহার করতে হবে। কারণ,  অতিরিক্ত লবন কিডনির জন্য মারাত্মক  ক্ষতিকর।

৪. নিয়মিত ব্যায়াম ও  ওজন নিয়ন্ত্রন করা:  কিডনি সমস্যার হ্রাস করার জন্য  নিয়মিত ব্যায়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাত্র ৩০ মিনিট ব্যায়াম দিনের ভিতরে করা যথেষ্ট হবে। হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, ফ্রি-হ্যান্ড ব্যায়াম ইত্যাদি কিডনি ভালো রাখার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 
 
৫. ধূমপান, পান-জর্দা ও মদপান বর্জনীয়: অতিরিক্ত  ধূমপান ও মদপানের ফলে  ধীরে ধীরে কিডনিতে রক্ত চলাচল হ্রাস পেতে পারে। ফলে কিডনির  কার্যকারিতাও  কমে যায়।তাছাড়া  কিডনি  ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ে। তাই এই বাজে অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। 
 
৬. কোমল পানীয় বর্জনীয়ঃ   বিভিন্ন রকমের কোমল পানীয় (কোকাকোলা, ফানটা ইত্যাদি) কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই কোমল পানীয় বর্জন করতে হবে এবং যখনই তৃষ্ণা পায়  নিরাপদ পানি পান করতে হবে।
 
৭. উচ্চ রক্ত চাপ, রক্তের চর্বি ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনঃ  উচ্চ রক্ত চাপ, রক্তের চর্বি ও ডায়াবেটিস  কিডনি বিকলের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই রোগগুলো  নিয়ন্ত্রণে না রাখলে কিডনি ধীরে ধীরে নীরবে কর্মক্ষমতা হারায়।


কোনো সমস্যা না থাকলেও  ৪০ বছর বয়সের পরে সব মানুষেরই বছরে অন্তত  একবার  ডায়াবেটিস, রক্তচাপ ও রক্তের চর্বি  পরীক্ষা করানো উচিত। এছাড়াও  কিডনির কার্যকারিতা দেখার জন্য রক্ত পরীক্ষা (Serum Creatinine)  করানো উচিত।

 
 ৮. ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কঃ  ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিয়ম না জেনে বা নিজে নিজে ফার্মেসী থেকে কোন ঔষধ বিশেষ করে ব্যথানাশক ওষুধগুলো সেবন  করা যাবে না। কারন, এতে অজান্তেই কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে।
 
৯. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণঃ কিডনি সুস্থ রাখার জন্য দৈনন্দিন জীবনের সব ধরনের ব্যস্ততার মধ্যেও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং রোজ পর্যাপ্ত  পরিমাণে ঘুমাতে হবে। 
 
 ১০. চিকিৎসকের পরামর্শঃ নারী-পুরুষ ভেদে সব বয়সের সব মানুষকেই কিডনি রোগের লক্ষণগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।কিডনি রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে- খাওয়ায় অরুচি, বমি বমি ভাব, প্রস্রাব কম হওয়া, পায়ে পানি আসা প্রভৃতি। এসব লক্ষণ দেখা দেওয়া মাত্রই   চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

 






 

Comments

Popular posts from this blog

ডাক্তারি—স্বপ্ন না আত্মত্যাগ?

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস ২০২৫: “জন্ম হোক সুরক্ষিত, ভবিষ্যৎ হোক আলোকিত”

কাটাছেঁড়া ছাড়াই কিডনি পাথর ভাঙতে অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি (ESWL)