কিডনি টিউমার ও তার চিকিৎসা
কিডনি টিউমার হলো কিডনিতে অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি, যা **সৌম্য (benign)** বা **দূরারোগ্য (malignant)** হতে পারে। সবচেয়ে সাধারণ ধরনের কিডনি ক্যান্সার হলো **রেনাল সেল কার্সিনোমা (Renal Cell Carcinoma - RCC)**, যা প্রায় ৯০% কিডনি ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ঘটে।
কিডনি টিউমারের ধরন:
1. সৌম্য (Benign) টিউমার:
- **অঙ্কোসাইটোমা (Oncocytoma)**: এটি ক্যান্সার নয়, কিন্তু আকারে বড় হতে পারে।
- **অ্যাঞ্জিওমায়োলিপোমা (Angiomyolipoma)**: সাধারণত এটি ক্যান্সার নয়, কিন্তু বড় হলে রক্তপাতের সম্ভাবনা থাকে।
2. **দূরারোগ্য (Malignant) টিউমার**:
- **রেনাল সেল কার্সিনোমা (RCC)**: সবচেয়ে প্রচলিত কিডনি ক্যান্সার।
- **ট্রানজিশনাল সেল কার্সিনোমা**: এটি কিডনির বা ইউরেটারের ভিতরের আস্তরণে হয়।
- **উইলমস টিউমার**: এটি শিশুদের মধ্যে পাওয়া যায়।
- **সারকোমা (Sarcoma)**: কিডনির সংযোগকারী টিস্যু থেকে উদ্ভূত বিরল ধরনের ক্যান্সার।
লক্ষণসমূহ:
কিডনি টিউমারের প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তবে টিউমার বড় হলে নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা দিতে পারে:
- মূত্রে রক্ত (হিমাটুরিয়া)
- পিঠে বা পাশে স্থায়ী ব্যথা
- অযৌক্তিক ওজন কমা
- ক্লান্তি
- অজানা কারণে জ্বর
- পেটে মাংসপিণ্ড বা ফোলাভাব
নির্ণয়:
কিডনি টিউমার নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষার প্রয়োজন হয়, যেমন:
1. **ইমেজিং পরীক্ষা**: সিটি স্ক্যান, এমআরআই, আল্ট্রাসাউন্ড বা এক্স-রে দ্বারা টিউমারের আকার ও অবস্থান বোঝা যায়।
2. **বায়োপসি**: টিউমারের টিস্যু নিয়ে তা ক্যান্সার কিনা পরীক্ষা করা হয়।
3. **রক্ত পরীক্ষা**: কিডনির কার্যক্ষমতা যাচাই এবং ক্যান্সারের লক্ষণ বোঝা যায়।
4. **মূত্র পরীক্ষা**: মূত্রে রক্ত বা ক্যান্সারের কোষ আছে কিনা তা দেখা হয়।
চিকিৎসা:
কিডনি টিউমারের চিকিৎসা এর ধরণ, স্তর এবং রোগীর স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে। নিম্নলিখিত চিকিৎসাগুলি প্রয়োগ করা যেতে পারে:
1. **সার্জারি**:
- **পার্শিয়াল নেফ্রেকটমি**: টিউমার এবং সামান্য সুস্থ টিস্যু অপসারণ করা হয়, ছোট টিউমারের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- **র্যাডিকাল নেফ্রেকটমি**: পুরো কিডনি, চারপাশের টিস্যু, এবং প্রয়োজনে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি অপসারণ করা হয়।
- **ল্যাপারোস্কোপিক বা রোবোটিক সার্জারি**: কিছু রোগীর জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যা কম ক্ষতি ও দ্রুত সুস্থতার জন্য উপযোগী।
2. **অ্যাব্লেশন থেরাপি**:
- **রেডিওফ্রিকোয়েন্সি অ্যাব্লেশন (RFA)**: তাপ দিয়ে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা হয়।
- **ক্রায়োঅ্যাব্লেশন**: ক্যান্সার কোষ বরফে পরিণত করে ধ্বংস করা হয়, সাধারণত ছোট টিউমারের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
3. **টার্গেটেড থেরাপি**:
টিউমার কোষের নির্দিষ্ট প্রোটিন বা মলিকিউলকে লক্ষ্য করে ওষুধ দেওয়া হয়, যেমন:
- **সুনিটিনিব (Sunitinib)**
- **পাজোপানিব (Pazopanib)**
4. **ইমিউনোথেরাপি**:
রোগীর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করার জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমন:
- **নিভোলুমাব (Nivolumab)**
- **পেম্ব্রোলিজুমাব (Pembrolizumab)**
5. **রেডিয়েশন থেরাপি**:
কিডনি ক্যান্সারের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য কম ব্যবহৃত হলেও, প্যালিয়েটিভ কেয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে।
6. **কেমোথেরাপি**:
সাধারণত কিডনি ক্যান্সারের জন্য কম কার্যকর, তবে কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে পারে, বিশেষ করে ট্রানজিশনাল সেল কার্সিনোমার জন্য।
7. **অ্যাক্টিভ পর্যবেক্ষণ**:
ছোট এবং ধীরগতিতে বৃদ্ধি পাওয়া টিউমারের জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়, বিশেষত বৃদ্ধ বা অসুস্থ রোগীদের ক্ষেত্রে।
পূর্বাভাস:
কিডনি ক্যান্সারের পূর্বাভাস নির্ভর করে:
- **ক্যান্সারের স্তর**: প্রাথমিক স্তরে ধরা পড়লে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি।
- **টিউমারের আকার**: ছোট টিউমার হলে ফলাফল ভালো হয়।
- **রোগীর স্বাস্থ্য**: অন্যান্য শারীরিক অবস্থার উপরও পূর্বাভাস নির্ভর করে।
প্রতিরোধ ও ঝুঁকি হ্রাস:
- ধূমপান ত্যাগ করা: ধূমপান কিডনি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা: উচ্চ রক্তচাপ কিডনি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- সঠিক ওজন ও খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা: স্থূলতা কিডনি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- জেনেটিক পরীক্ষা: পারিবারিক ইতিহাস থাকলে জেনেটিক পরীক্ষার বিষয়ে বিবেচনা করা যেতে পারে।
প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্তকরণ এবং সঠিক চিকিৎসা কিডনি টিউমারের মোকাবিলায় সহায়ক।
Comments
Post a Comment