মৃত্যুর সময় নির্ধারণে অলগর মরটিসের ভূমিকা: শীতলতার প্রক্রিয়া
- Get link
- X
- Other Apps
অলগর মরটিস (algor mortis) হল মৃত্যুর পর দেহের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে পরিবেশের সাথে সমান হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া। এটি ফরেনসিক বিজ্ঞান ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ এটি মৃত্যুর সময় নির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। মৃত্যুর পর রক্তসঞ্চালন এবং তাপ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেহের তাপমাত্রা ক্রমশ কমতে শুরু করে। অলগর মরটিসকে বাংলায় "মৃতদেহের শীতলতা" হিসেবেও বলা হয়।
অলগর মরটিসের কারণ ও প্রক্রিয়া:
মৃত্যুর পর যখন শরীরের রক্তসঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায় এবং কোষের মেটাবলিজম থেমে যায়, তখন শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে শরীরের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে পরিবেশের তাপমাত্রার সাথে মিলে যায়। সাধারণত, শরীর প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১ থেকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে ঠান্ডা হয়, যতক্ষণ না শরীর এবং পরিবেশের তাপমাত্রা সমান হয়।
অলগর মরটিসের হার বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে, যেমন:
- পরিবেশের তাপমাত্রা: ঠান্ডা আবহাওয়ায় শরীর দ্রুত ঠান্ডা হয়, যেখানে উষ্ণ আবহাওয়ায় এটি ধীরে হয়।
- শরীরের ওজন ও আকার: বড় শরীর বা বেশি চর্বিযুক্ত শরীর ধীরে ঠান্ডা হয়, কারণ তাপ সংরক্ষণের ক্ষমতা বেশি থাকে।
- বায়ুপ্রবাহ ও আর্দ্রতা: শুষ্ক ও বাতাসপূর্ণ পরিবেশে দেহ দ্রুত ঠান্ডা হতে পারে।
অলগর মরটিসের ধাপ:
প্রাথমিক শীতলতা: মৃত্যুর পর প্রথম কয়েক ঘণ্টা দেহের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। শরীরের কেন্দ্রস্থলের তাপমাত্রা (যেমন যকৃত, হৃদপিণ্ড) প্রথমে বেশি থাকে, তবে তাপ বিকিরণ এবং পরিবেশের সাথে যোগাযোগের ফলে তা কমতে শুরু করে।
মাঝামাঝি শীতলতা: প্রায় ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টার মধ্যে দেহের তাপমাত্রা দ্রুত কমতে থাকে এবং শরীরের তাপমাত্রা পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে শুরু করে।
পূর্ণ শীতলতা: প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর, শরীরের তাপমাত্রা সম্পূর্ণরূপে পরিবেশের তাপমাত্রার সমান হয়ে যায়। এই পর্যায়ে দেহটি পুরোপুরি ঠান্ডা হয়ে যায়।
অলগর মরটিসকে প্রভাবিতকারী কারণসমূহ:
- পরিবেশের তাপমাত্রা: উষ্ণ পরিবেশে দেহের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমে, যেখানে শীতল পরিবেশে এটি দ্রুত কমতে পারে।
- শরীরের পৃষ্ঠের এলাকা: শরীরের ত্বকের পরিধি যত বেশি, তাপ হারানো তত দ্রুত হয়।
- পোশাক: মোটা পোশাক বা দেহে চাদর মোড়ানো থাকলে তাপ হারানো কম হয় এবং দেহ ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়।
- রক্তের পরিমাণ ও তাপ: যারা শারীরিক পরিশ্রমের ফলে মৃত্যুর কাছাকাছি এসেছেন, তাদের শরীরের তাপ বেশি থাকে, ফলে তাদের দেহ ধীরে ধীরে ঠান্ডা হতে পারে।
অলগর মরটিসের ফরেনসিক গুরুত্ব:
অলগর মরটিস ফরেনসিক বিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মৃত্যুর সময় নির্ধারণে এটি অন্যতম প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত, মৃত্যুর পর শরীরের তাপমাত্রা নিয়মিতভাবে মাপা হয় এবং তা ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা পরিবেশের তাপমাত্রার সাথে তুলনা করে মৃত্যুর আনুমানিক সময় নির্ধারণ করেন।
যদিও অলগর মরটিস মৃত্যুর সময় নির্ধারণে সহায়ক, তবুও এটি একমাত্র নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি নয়। অন্যান্য পরিবর্তন যেমন রিগর মরটিস (পেশীর কঠিন হয়ে যাওয়া), লিভর মরটিস (রক্তের নিচে জমে যাওয়া) ইত্যাদির সাথে মিলিয়ে মৃত্যুর সময় নির্ধারণ করা হয়।
উপসংহার:
অলগর মরটিস হল মৃত্যু পরবর্তী দেহের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যা শরীরের তাপমাত্রাকে পরিবেশের তাপমাত্রার সাথে সামঞ্জস্য করতে বাধ্য করে। এটি মৃত্যুর সময় নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং ফরেনসিক ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়। তবে, মৃত্যুর সময় সঠিকভাবে নির্ধারণের জন্য অন্যান্য শারীরিক প্রক্রিয়ার সাথে এটি তুলনা করা প্রয়োজন।
- Get link
- X
- Other Apps
Comments
Post a Comment