আল্লাহ সৃষ্টির রহস্য
আপন নূর দিয়া করিয়া সৃজন,
আরশের উপর কুরশীর মাঝে রাখিলেন গোপন।
“আপন নূর দিয়া করিয়া সৃজন, আরশের উপর কুরশীর মাঝে রাখিলেন গোপন” এই উক্তিটি ইসলামী দর্শনের একটি গভীর তত্ত্বকে তুলে ধরে, যেখানে আল্লাহর নূর বা আলো দ্বারা সৃষ্টি, আরশ (আল্লাহর সিংহাসন) ও কুরশী (আল্লাহর ক্ষমতা এবং জ্ঞানের প্রতীক) এবং গোপন বিষয়গুলোর উল্লেখ আছে। বইজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই বক্তব্যের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করা যেতে পারে:
বৈজ্ঞানিকভাবে, আলো (অথবা ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন) শক্তির একটি রূপ। বিজ্ঞান আলোর মাধ্যমে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যা করে, যেমন ফটোসিনথেসিস, যা সৃষ্টির মূল উপাদানগুলির একটি।
সৃষ্টির প্রক্রিয়া: আধুনিক বিজ্ঞান মহাবিশ্বের উৎপত্তির জন্য বিগ ব্যাং তত্ত্বকে গ্রহণ করে, যা নির্দেশ করে যে, মহাবিশ্ব একটি অত্যন্ত গরম ও ঘন অবস্থান থেকে শুরু হয়েছে। এই ধারণা আল্লাহর নূরের মাধ্যমে সৃষ্টির একটি প্রাথমিক ঘটনা হিসাবে দেখা যেতে পারে।
ইসলামী দর্শনে আল্লাহর নূরকে সাধারণত জ্ঞান এবং সত্যের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। বৈজ্ঞানিকভাবে, আলো (ফোটন) এক ধরনের শক্তি। সমস্ত জীবের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি জীবনের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার (যেমন, ফটোসিনথেসিস) জন্য অপরিহার্য। সুতরাং, আল্লাহর নূর দ্বারা সৃষ্টি বোঝায় যে, সৃষ্টির পেছনে একটি শক্তি এবং শক্তির উৎস রয়েছে।
বিজ্ঞান ও মহাবিশ্ব: আধুনিক বিজ্ঞানে মহাবিশ্বের উৎপত্তি বিগ ব্যাং থেকে শুরু হয়েছে। সৃষ্টির এই ধারণা নূরের মাধ্যমে একটি শক্তির প্রকাশ। সৃষ্টির বিভিন্ন স্তর যেমন পদার্থ, শক্তি, এবং জীবনের আবির্ভাব—এগুলো আল্লাহর পরিকল্পনার ফল।
### ১. আল্লাহর নূর এবং সৃজন
- **নূর বা আলো**: সৃষ্টি এবং শক্তি: এই বক্তব্যটি নির্দেশ করে যে, আল্লাহ তাঁর “নূর” বা আলো দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে, আলো একটি শক্তি এবং তথ্য বহন করে। আলো এবং অন্যান্য শক্তির উৎস হিসেবে, অনেক বিজ্ঞানী মহাবিশ্বের সৃষ্টিকে আলোর সাথে তুলনা করে। আলোর তরঙ্গ ও কণার আচরণ আমাদের মহাবিশ্বের মৌলিক ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
### ২. আরশ ও কুরশী
- **আরশ**: আরশ হল আল্লাহর মহিমার এবং কর্তৃত্বের প্রতীক। এটি একটি উচ্চতর স্তরকে নির্দেশ করে, যা সমস্ত সৃষ্টির উপর নিয়ন্ত্রণ করে।বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণে, এই ধারণাটি মহাবিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু বা সৃষ্টির প্রাথমিক স্থান নির্দেশ করে। মহাবিশ্বের প্রকৃতি ও কাঠামো বিশ্লেষণ করার সময় আমরা একটি কেন্দ্রীয় বিন্দুর ধারণা খুঁজে পাই, যা আমাদের এই ধর্মীয় চিন্তার সাথে মেলে।
কিছু গবেষক মহাবিশ্বের কেন্দ্রীয় বিন্দুতে কিছু অদ্ভুত ঘটনা বা শক্তি নির্দেশ করে, যা আরশের ধারনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। মহাবিশ্বের কাঠামো, যেমন গ্যালাক্সি এবং তারার অবস্থান, একটি কেন্দ্রীয় বিন্দু বা “থ্রোন” এর ধারণাকে প্রকাশ করতে পারে।
আরশ (সিংহাসন): আরশ আল্লাহর মহিমান্বিত স্থানকে নির্দেশ করে, যেখানে তিনি সমস্ত সৃষ্টি পরিচালনা করেন। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণে, আরশকে মহাবিশ্বের কেন্দ্র বা নিয়ন্ত্রণের স্থান হিসেবে দেখা যেতে পারে। যেমন, মহাবিশ্বের নিয়মাবলী (যেমন, মাধ্যাকর্ষণ এবং আপেক্ষিকতা) সবকিছুর উপর নিয়ন্ত্রণ রাখে।
- **কুরশী**: কুরশী আল্লাহর জ্ঞান ও শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে। । এটি নির্দেশ করে যে আল্লাহ সমস্ত কিছুর উপর নিয়ন্ত্রণ রাখেন। বৈজ্ঞানিকভাবে, আমরা যখন মহাবিশ্বের কাঠামো ও নিয়মগুলো অধ্যয়ন করি, তখন আমরা বুঝতে পারি যে একটি নির্দিষ্ট আইন বা সূত্র অনুসরণ করে সব কিছু চলছে এবংবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণে, সমস্ত সৃষ্টির একটি নীতিমালা বা সূত্র রয়েছে, যা এই কুরশীর ধারণাকে সমর্থন করে। মহাবিশ্বের বৈজ্ঞানিক আইন (যেমন নিউটনের আইন, আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা) এই নীতিগুলির অন্তর্ভুক্ত।
কুরশী (চেয়ার): কুরশী আল্লাহর জ্ঞান এবং ক্ষমতার প্রতিনিধিত্ব করে। এটি বুঝায় যে, আল্লাহর সৃষ্টির উপর নিয়ন্ত্রণ আছে। বৈজ্ঞানিকভাবে, মহাবিশ্বের প্রতিটি উপাদান একটি নির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করে। প্রতিটি পরমাণু ও কণার আচরণও সেই নিয়ম অনুযায়ী কাজ করে, যা কুরশীর ধারনার সাথে মিলে যায়।
### ৩. গোপনীয়তা
- **গোপন**: এই শব্দটি আল্লাহর অসীম জ্ঞান এবং মানবজাতির জন্য অজানা বিষয়গুলোর প্রতীক। বৈজ্ঞানিকভাবে, আমাদের মহাবিশ্বের অনেক বিষয় এখনও গোপন বা অজানা। যেমন, মহাবিশ্বের প্রায় ৯৫% “ডার্ক ম্যাটার” এবং “ডার্ক এনার্জি” দ্বারা গঠিত, এবং এগুলি মহাবিশ্বের বেশিরভাগ ভর এবং শক্তি গঠন করে। যা আমাদের উপলব্ধির বাইরে।সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান খুব সীমিত,বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণে, এই অজানা বিষয়গুলি আমাদের সীমাবদ্ধতা এবং আল্লাহর অসীম জ্ঞানকে নির্দেশ করে।
### ৪. সৃষ্টির উদ্দেশ্য
- **বিজ্ঞান ও ধর্মের সংযোগ**: সৃষ্টির উদ্দেশ্য এবং প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা বিজ্ঞান এবং ধর্ম উভয়ের ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞান সৃষ্টির প্রক্রিয়া, যেমন বিগ ব্যাং, এবং মহাবিশ্বের বিকাশ ব্যাখ্যা করে। কিন্তু এটি সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করে না।ধর্ম এই সৃষ্টির উদ্দেশ্য এবং তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করে, যা মানব জীবনের মূল উদ্দেশ্যের সন্ধান করে।
### উপসংহার
“আপন নূর দিয়া করিয়া সৃজন, আরশের উপর কুরশীর মাঝে রাখিলেন গোপন” এই উক্তিটি আল্লাহর সৃষ্টির প্রক্রিয়া এবং তাঁর মহিমাকে তুলে ধরে। বৈজ্ঞানিকভাবে, এই ধারণাগুলি আলোর শক্তি, মহাবিশ্বের কাঠামো, এবং আমাদের অজানা বিষয়গুলোর সাথে সম্পর্কিত। বিজ্ঞান ও ধর্ম একত্রে একটি বৃহত্তর সৃষ্টির গল্প উপস্থাপন করে, যেখানে উভয়ের মধ্যে সমন্বয় খুঁজে পাওয়া সম্ভব।
পদার্থের অণু, পরমাণু, এবং আলো—এই তিনটি মৌলিক ধারণার মধ্যে সম্পর্ক বোঝা পদার্থবিদ্যার মূল বৈশিষ্ট্য। আসুন, আমরা এই তিনটি ধারণাকে আলাদাভাবে এবং তাদের সম্পর্কের দিক থেকে বিশ্লেষণ করি।
### ১. পদার্থের অণু
- **অণু**: পদার্থের অণু হল দুটি বা ততোধিক পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত একটি কণা। অণু কোনও পদার্থের মৌলিক রাসায়নিক একক হিসেবে কাজ করে এবং এটি একটি নির্দিষ্ট গঠন এবং গুণাবলী নির্ধারণ করে। উদাহরণস্বরূপ, জলের অণু (H₂O) দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু এবং একটি অক্সিজেন পরমাণু দিয়ে গঠিত।
### ২. পরমাণু
- **পরমাণু**: পরমাণু হল একটি মৌলিক কণিকা যা একটি নিউক্লিয়াস (প্রোটন এবং নিউট্রন দ্বারা গঠিত) এবং চারপাশে ঘূর্ণায়মান ইলেকট্রনের সমন্বয়ে গঠিত। প্রতিটি মৌল (যেমন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন) একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা এবং প্রকারের পরমাণু দ্বারা গঠিত। পরমাণুর বৈশিষ্ট্যগুলি যেমন ভর, চার্জ, এবং শক্তি স্তর রাসায়নিক গুণাবলী নির্ধারণ করে।
### ৩. আলো
- **আলো**: আলো হলো একটি ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশনের রূপ, যা ফোটনের মাধ্যমে গঠিত। এটি শক্তির একটি রূপ এবং এর গতি শূন্যের গতির গতি। আলো বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্য নিয়ে গঠিত, যা আমাদের চোখে দৃশ্যমান। এটি বিভিন্ন পদার্থের সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করে তাদের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করতে পারে।
### ৪. সম্পর্ক
- **অণু ও পরমাণুর মধ্যে সম্পর্ক**:
- অণুগুলি পরমাণু থেকে গঠিত, এবং পরমাণু একসাথে যুক্ত হয়ে অণু তৈরি করে। উদাহরণস্বরূপ, CO₂ (কার্বন ডাইঅক্সাইড) একটি অণু যা একটী কার্বন পরমাণু এবং দুইটি অক্সিজেন পরমাণু নিয়ে গঠিত।
- **আলো ও পদার্থের অণুর মধ্যে সম্পর্ক**:
- আলো যখন একটি অণুর সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটায়, তখন এটি অণুর অভ্যন্তরীণ স্তরে ইলেকট্রনের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে। এই পরিবর্তনগুলির ফলে অণুর মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে, উদাহরণস্বরূপ, ফটোসিনথেসিসে আলো উদ্ভিদের জন্য শক্তি উৎপাদনে সহায়ক হয়।
- আলোর শক্তি অণুর বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। যেমন, যদি একটি অণু আলোর নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্য শোষণ করে, তা অণুর অভ্যন্তরীণ ইলেকট্রনের উচ্চ শক্তির স্তরে স্থানান্তরিত হতে পারে।
### ৫. আলোর প্রভাব
- আলোর শক্তি বিভিন্ন পদার্থের বৈশিষ্ট্যকে প্রভাবিত করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি অণু UV (আলট্রাভায়োলেট) আলোর সংস্পর্শে আসে, তাহলে এটি অণুর রাসায়নিক বন্ধন ভাঙতে পারে বা নতুন অণুর গঠন করতে পারে।
### উপসংহার
পদার্থের অণু, পরমাণু, এবং আলো পরস্পর সংযুক্ত। অণুগুলি পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত এবং আলো এই অণুর সঙ্গে ইন্টারঅ্যাক্ট করে তাদের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করতে পারে। এই সম্পর্কগুলি পদার্থবিদ্যার মৌলিক ধারণাগুলি বোঝাতে সাহায্য করে এবং আমাদের চারপাশের পৃথিবীকে বুঝতে সহায়তা করে।
"প্রথম কারণ" ধারণা
দার্শনিকভাবে, "প্রথম কারণ" (First Cause) বা "কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট" এর মাধ্যমে বোঝানো হয় যে, মহাবিশ্বের সবকিছু একটা কারণ থেকে উৎপন্ন হয়েছে, কিন্তু সেই প্রথম কারণ নিজে কোনো কারণের দ্বারা সৃষ্টি হয়নি। এই ধারণাটি কিছু ক্ষেত্রে আল্লাহর ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে আল্লাহকে সেই প্রথম কারণ বা চূড়ান্ত সত্তা হিসেবে দেখা হয় যিনি কোনো প্রভাব বা কারণে সৃষ্ট নন।
কারণের প্রশ্ন এবং প্রথম কারণ
অ্যারিস্টটল এবং অন্যান্য প্রাচীন দার্শনিকদের মতে, সবকিছুরই একটি প্রথম কারণ আছে, যাকে বলা হয় "Prime Mover" বা "প্রথম চালক"। ইসলামী দার্শনিকগণ এই ধারণা গ্রহণ করেছেন এবং বলছেন যে আল্লাহ হচ্ছেন সেই প্রথম কারণ, যিনি নিজে কোনো কারণ দ্বারা সৃষ্ট নন। বিজ্ঞানেও "প্রথম কারণ" নিয়ে তর্ক করা হয়। কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন যে, মহাবিশ্বের শুরুতে একটি শূন্যস্থান বা স্বতঃসিদ্ধ অবস্থা ছিল, যেখান থেকে সবকিছু উদ্ভূত হয়েছে।
এই তত্ত্ব অনুযায়ী, সব কিছু একটি প্রথম কারণ থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যা নিজে সৃষ্টি হয়নি। ইসলামী দর্শনে আল্লাহকে এই প্রথম কারণ হিসেবে দেখা হয়। তাই, আল্লাহকে কেউ সৃষ্টি করে নাই, কারণ তিনি সব কিছুর উত্স।
প্রথম কারণের তত্ত্ব
অ্যারিস্টটল: প্রথম কারণের ধারণার মূল ভিত্তি অ্যারিস্টটলের চিন্তাধারা থেকে এসেছে। তিনি বলেছিলেন যে, সব কিছুই একটি কারণের মাধ্যমে ঘটে এবং এই কারণের একটি প্রথম চালক থাকা উচিত, যা নিজেই কোন কারণে সৃষ্টি হয়নি।
বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক সমর্থন: আধুনিক বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব, যেমন বিগ ব্যাং তত্ত্ব, সৃষ্টির প্রাথমিক কারণের ধারণাকে কিছুটা সমর্থন করে, কিন্তু এটি আল্লাহর অস্তিত্বের সাথে যুক্ত হয় না।
প্রথম কারণ বা সৃষ্টিকর্তা
ফিলোসফি ও থিওলজি-তে একটি মৌলিক তত্ত্ব আছে, যা “প্রথম কারণ” বা “চালক” (Prime Mover) হিসেবে পরিচিত। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, সব কিছুর পিছনে একটি প্রথম কারণ থাকা উচিত, যা নিজে সৃষ্টি হয়নি। ইসলামী দার্শনিকেরা এই ধারণাকে গ্রহণ করেছেন এবং আল্লাহকে সেই প্রথম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাই, আল্লাহকে সৃষ্টি করা হয়নি—তিনি সৃষ্টির চেয়ে প্রাচীন।
আল্লাহ "আল-খালিক" অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা, যিনি নিজে সৃষ্ট নন। দর্শনেও এ ধরনের ধারণাকে প্রাথমিক কারণ (first cause) হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়, যা সবকিছুর উৎপত্তি, কিন্তু যার কোনো উৎপত্তি নেই।
সৃষ্টির প্রথম কারণ হিসেবে, আল্লাহ নিজে কোনো কারণে জন্মাননি বা সৃষ্ট হননি। এই যুক্তি ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত, যেখানে বলা হয়, তিনি "আল-আওয়াল" (প্রথম) এবং "আল-আখির" (শেষ)।
আল্লাহ নিজেই সৃষ্টি প্রক্রিয়ার বাইরে থাকেন। এই ধারণাটি দার্শনিকভাবে প্রাচীন ধারণা "প্রথম কারণ" বা "Prime Mover"-এর সঙ্গে যুক্ত। দার্শনিকরা অনেক সময় যুক্তি দেন যে মহাবিশ্বের সবকিছুরই একটি কারণ আছে, কিন্তু সেই প্রাথমিক কারণ বা সত্তা নিজে কোনো কারণের ফল নয়। আল্লাহকে সেই প্রাথমিক কারণ হিসাবে দেখা হয়, যিনি সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা কিন্তু নিজে অযৌক্তিক বা অকারণ।
প্রথম কারণের ধারণা
দর্শনশাস্ত্রে একটি মৌলিক তত্ত্ব আছে, যা “প্রথম কারণ” বা “প্রধান চালক” (Prime Mover) হিসাবে পরিচিত। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, সব কিছুর একটি প্রাথমিক কারণ থাকা উচিত, যা নিজে সৃষ্টি হয়নি। ইসলামী দার্শনিকরা এই ধারণাকে গ্রহণ করেছেন এবং আল্লাহকে সেই প্রথম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এইভাবে, আল্লাহকে কেউ সৃষ্টি করেনি, কারণ তিনি নিজেই সৃষ্টির উৎস।
"প্রথম কারণ" এবং দার্শনিক যুক্তি:
দার্শনিকভাবে, আল্লাহর ধারণাটি "প্রথম কারণ" বা কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট নামে পরিচিত। এই যুক্তি অনুসারে, পৃথিবীর প্রতিটি কারণের পিছনে একটি কারণ থাকে, এবং এই কারণগুলোকে অনুসরণ করতে গেলে শেষ পর্যন্ত একটি চূড়ান্ত কারণের প্রয়োজন হয়, যা নিজে কোনো কারণ দ্বারা প্রভাবিত হয় না। এই চূড়ান্ত কারণ বা প্রথম কারণকে আল্লাহ বা ঈশ্বর বলা হয়, যিনি মহাবিশ্বের সৃষ্টির জন্য দায়ী।
যদিও "প্রথম কারণ" যুক্তিটি মূলত দার্শনিক, এটি বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের সাথে মিলিত হয়, বিশেষ করে মহাকাশবিজ্ঞানে ও কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানে। বিগ ব্যাং তত্ত্ব মহাবিশ্বের উৎপত্তি বোঝার একটি কাঠামো প্রদান করে, তবে এটি মহাবিশ্বের কারণ বা এর বাইরের কিছুর অস্তিত্ব সম্পর্কে একটি চূড়ান্ত উত্তর দিতে পারে না। সুতরাং, প্রথম কারণের আলোচনা, বিশেষ করে ঈশ্বরের ধারণার সাথে, বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান ও দার্শনিক অনুসন্ধানের একটি সংমিশ্রণ রয়ে যায়।
চিরন্তন বা স্বতঃসিদ্ধ সত্তার ধারণা
বিজ্ঞানে অনেক কিছুর একটি সূত্র বা কারণ থাকতে হয়। তবে দর্শন ও পদার্থবিদ্যার মধ্যে এমন কিছু ধারণা রয়েছে যা চিরন্তন বা স্বতঃসিদ্ধ হতে পারে। যেমন, অনেক তত্ত্ব বলে যে মহাবিশ্বের কিছু অংশ বা নিয়ম চিরন্তন বা অসীম হতে পারে, যেমন শক্তির সংরক্ষণ সূত্র। একইভাবে, ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে আল্লাহ চিরন্তন এবং তিনি সৃষ্টির বাইরের একজন সত্তা।
চিরন্তনতা
আল্লাহর অস্তিত্ব চিরন্তন—তার কোনো শুরু বা শেষ নেই।
সময় ও স্থান
বিজ্ঞান অনুসারে, সময় এবং স্থান মহাবিশ্বের সৃষ্টির সাথে শুরু হয়। এর মানে হলো, আল্লাহ যদি সময় ও স্থানের বাইরে থাকেন, তবে তিনি সৃষ্টির নিয়মের বাইরে অবস্থান করেন। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে, আল্লাহকে অসীম ও চিরন্তন হিসেবে দেখা হয়। তাই, আল্লাহর অস্তিত্বের উপরে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করা কঠিন, কারণ তিনি সময় ও স্থানের সংজ্ঞা থেকে মুক্ত।
(((((((((((((((((((আল্লাহকে সৃষ্টি করা হয়নি, কারণ তিনি অসীম ও চিরন্তন। এটি ধর্মীয় বিশ্বাসের একটি মৌলিক ধারণা, যা সৃষ্টির নীতির সাথে সম্পর্কিত।
বিজ্ঞানী দৃষ্টিকোণ থেকে, "সৃষ্টি" সাধারণত কিছু নির্দিষ্ট উপাদান বা অবস্থার সমন্বয়ে ঘটে। যেমন, পদার্থ ও শক্তির মৌলিক অণুগুলো একত্রে এসে বিভিন্ন বস্তু তৈরি করে। কিন্তু আল্লাহ বা ঈশ্বরের ধারণা একেবারেই আলাদা। তিনি পরম সত্তা, যার কোনো শুরু বা শেষ নেই।
বিজ্ঞান বলছে, ব্রহ্মাণ্ডের উৎপত্তি বিগ ব্যাং থিওরি দ্বারা ব্যাখ্যাত, যেখানে একটি অতি ঘনত্বের এবং তাপের অবস্থান থেকে মহাবিশ্বের সৃষ্টি ঘটে। কিন্তু এই ব্রহ্মাণ্ডের বাইরে বা তার সৃষ্টির কারণ হিসেবে কোনো ঈশ্বরের অস্তিত্বের ধারণা প্রশ্নাতীত।
এছাড়া, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে, আল্লাহর অশ্রুত অস্তিত্বের ধারণা হলো যে, তিনি সমস্ত কিছুর নির্মাতা এবং সকল কিছুর বাইরে অবস্থান করেন। সুতরাং, আল্লাহকে সৃষ্টি করা সম্ভব নয়, কারণ সৃষ্টির একটি মৌলিক নীতি হলো: "সৃষ্টি কিছু না কিছু থেকে আসে, কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো কিছু থেকে আসে না।"
অতএব, আল্লাহর সত্তা ও তাঁর অসীমতা এ বিষয়গুলোর উপর ভিত্তি করে বলা যায়, আল্লাহকে সৃষ্টি করা সম্ভব নয়।)))
সুতরাং, আল্লাহকে সৃষ্টি করা হয়নি কারণ তিনি সব কিছুর মূল এবং তাঁর অস্তিত্বের ভিত্তিতে সৃষ্টির ধারণা দাঁড়িয়ে আছে । তিনি চিরন্তন, অসীম এবং সৃষ্টির মূল কারণ।এভাবে ধর্ম ও বিজ্ঞান একে অপরকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে, তবে আল্লাহর অস্তিত্বের মৌলিক নীতির মধ্যে একটি মিল রয়েছে।
Comments
Post a Comment