কুরআন ও হাদিসের দৃষ্টিতে বাংলা নববর্ষ

 বাংলা নববর্ষ (১লা বৈশাখ) উদযাপন ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে জায়েজ (বৈধ) নাকি নাজায়েজ (অবৈধ), তা বুঝতে হলে কুরআন ও হাদীসের আলোকে বিষয়টি বিশ্লেষণ করতে হবে। নিচে কুরআন, হাদীস এবং উলামায়ে কেরামের বক্তব্যের ভিত্তিতে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো:


১. কুরআনের দৃষ্টিতে:

আল্লাহ বলেন:

"তোমাদের জন্য আল্লাহ যে রিজিক হালাল করেছেন তা থেকে তোমরা খাও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।"
— (সূরা আল-আন‘আম: ১৪২)

এ আয়াত হালাল-হারামের ব্যাপারে শয়তানের অনুসরণ না করার নির্দেশনা দেয়। কোনো উৎসব উদযাপন যদি শিরক, কুফর বা বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণ হয়, তবে তা ইসলাম অনুমোদন করে না।


২. হাদীসের আলোকে:

রাসূল (সা.) বলেন:

"যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের অনুকরণ করবে, সে তাদেরই একজন হবে।"
— (সুনান আবু দাউদ: ৪০৩১, সহীহ হাদীস)

অন্য হাদীসে তিনি বলেন:

"আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য বছরে দুইটি ঈদ নির্ধারণ করেছেন — ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা।"
— (সুনান আবু দাউদ: ১১৩৪)

এখানে স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে, ইসলামে মূলত দুটি ধর্মীয় উৎসব অনুমোদিত — ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। অতিরিক্ত কোনো উৎসব উদযাপন যদি ধর্মীয় রূপ পায়, তা বিদআত হিসেবে গণ্য হবে।


৩. বাংলা নববর্ষের ইতিহাস ও প্রকৃতি:

বাংলা নববর্ষ মূলত মুঘল সম্রাট আকবরের সময় প্রবর্তিত, যা হিজরি ও সৌর বছরের সমন্বয়ে তৈরি। এটি কৃষি ও খাজনা সংগ্রহের সুবিধার জন্য চালু হয়। তবে পরবর্তীতে এটি একটি সাংস্কৃতিক উৎসবে রূপ নেয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, এ উৎসবে নারীদের অশালীন পোশাক, মঙ্গল শোভাযাত্রা (যার অনেক উপাদান হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রীতি অনুকরণ করে), গান-বাজনা ইত্যাদি বিদ্যমান থাকে।


৪. উলামায়ে কেরামের মতামত:

(ক) শাইখ সালিহ আল-উসাইমিন (রহ.) বলেন:

“মুসলমানদের জন্য নিজস্ব ধর্মীয় উৎসব ব্যতীত অন্য কোনো উৎসব উদযাপন করা জায়েজ নয়। এমনকি যদি কেউ নিছক আনন্দ ও বিনোদনের জন্যও করে, তাও হারাম।”

(খ) বাংলাদেশের মুফতিদের মতে:

যদি বাংলা নববর্ষ উদযাপন হয় শুধুমাত্র সামাজিক বা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে এবং এতে ইসলামের কোনো বিধি লঙ্ঘিত না হয় (যেমন: অশালীনতা, গান-বাজনা, শিরকি কাজ), তাহলে নিছক ‘নতুন বছরের শুরু’ হিসেবে শুভেচ্ছা জানানো, ভালো কিছু খাওয়া ইত্যাদি মুবাহ (নিরপেক্ষ) হতে পারে।

কিন্তু যদি তাতে বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণ থাকে বা তা ধর্মীয় উৎসবের রূপ ধারণ করে, তবে তা নাজায়েজ ও বিদআত হবে।


সারসংক্ষেপ:

দিক বিশ্লেষণ
যদি বাংলা নববর্ষ উদযাপন হয় শিরক, বিদআত, নাচ-গান, অশ্লীলতা, বা বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণে হারাম/নাজায়েজ
যদি শুধুমাত্র সামাজিকভাবে শুভেচ্ছা, পরিবারে ভালো সময় কাটানো, ইসলামসম্মতভাবে পালন করা হয় মুবাহ/জায়েজ (শর্তসাপেক্ষে)

শেষ কথা:
বাংলা নববর্ষ ইসলামি শরীয়তের পরিপন্থী কোনো আচরণ ছাড়া, শুধুমাত্র একটি সামাজিক কালচারে অংশগ্রহণের মানসিকতায় পালন করলে কিছু আলেম তা উপায়ন্তরহীন জায়েজ বলেছেন, তবে এটিকে ধর্মীয় উৎসবে রূপ দেওয়া, বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণ করা, বা অশ্লীল কর্মকাণ্ডে জড়ানো সম্পূর্ণরূপে নাজায়েজ ও গুনাহের কাজ

তথ্যসূত্র:

  • সুনান আবু দাউদ (হাদীস ৪০৩১, ১১৩৪)

  • ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা: ৩/৮৮

  • ইসলামিক ফিকহ একাডেমি, জেদ্দা

  • বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরামের বক্তব্য (মুফতি তাকী উসমানী, শাইখ আসলামী ইত্যাদি)।

Comments

Popular posts from this blog

ডাক্তারি—স্বপ্ন না আত্মত্যাগ?

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস ২০২৫: “জন্ম হোক সুরক্ষিত, ভবিষ্যৎ হোক আলোকিত”

কাটাছেঁড়া ছাড়াই কিডনি পাথর ভাঙতে অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি (ESWL)